কক্সবাজার, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে রোহিঙ্গা রেজুলেশন গৃহীত

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথভাবে উত্থাপিত রেজুলেশনটিতে ১০৯টি দেশসহ পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রেজুলেশনটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে— মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও অবনতির শিকার হয়েছে। এতে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, রাখাইন রাজ্যে স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সব মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে রেজুলেশনটিতে আঞ্চলিক দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সর্বসম্মতিক্রমে আসিয়ানের পাঁচ দফা সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর রেজুলেশনটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

রেজুলেশনটিতে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও বাংলাদেশের নেয়া মানবিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ন্যায় বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আইসিসি, আইআইএমএম ও অন্যান্য দায়বদ্ধতা নিরূপণকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ যেভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে সেটিও প্রশংসিত হয়েছে।

‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ নীতির আওতায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো যেন বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখে, সে আহ্বানও জানানো হয়েছে এবারের রেজুলেশনে।

রেজুলেশনটি গৃহীত হওয়ার সময় বাংলাদেশের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি পাওয়ার দাবি রাখে। এ মানবিক সাড়াদান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থায়ন। গুরুত্বপূর্ণ এ মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃত্ব দেয়ায় ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতির অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। বাস্তুচ্যুত এ জনগোষ্ঠীর সবসময়ই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। সে লক্ষ্যে আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উভয় ফ্রন্টে বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি। যাতে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।’

জাতিসংঘের এ রেজুলেশনটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি বিভিন্ন অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি প্রকাশের একটি অনন্য উদাহরণ। তবে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে বিলম্বিত হচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।

পাঠকের মতামত: